একটি আপাদমস্তক (বস্তুত কল্পিত) স্বপ্নের গল্প / A Neurotic's Delirium (2)

শেষ রাতের দিকে চোখ খুলে গেলো প্রচন্ড শীতে।আবছা আলোয় 'টেক দিস ওয়াল্টজ' বাজছে তখনো।নাজিম হিকমেটের "I love you,like waking up at night with high fever and drinking water with tap in my mouth" মনে এলো একবার। পরের দিন পরীক্ষা এবং একটি ইন্টার্নশিপের ইন্টারভিউ।
সকাল থেকে বৃষ্টি নামলো খুব। কোনোরকমের ইউনিভার্সিটি থেকে বাসস্ট্যান্ড অবধি যেতে পুরোটা ভিজে গিয়ে বসতেই একজন ব্যাচমেট এসে বসলো।খানিক কথা হওয়ার পরে আরো দুজন পাশের সিট্ দুটোয় বসলো. ব্যাচমেট গান শুনতে বসলো হেডফোনে, চাহনিতে খানিক অস্বস্তিই হচ্ছিলো। "স্বাধীনতা তুমি শ্রাবনে অকুল মেঘনার বুক...." মনে পড়তে একটা অস্ফুট হাসি পেলো বোধহয়. রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে কাজ করে যে ছেলেটা,একটা ছেঁড়া গেঞ্জি পরে আনমনে ভিজছিলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে.রাস্তার ক্যাকোফোনি,ছাই রঙের শহর ছাপিয়ে গিয়ে তখন শুধু " জলভরা মেঘ বৃষ্টির বেদনাকে,বুকে চেপে ধরে থমকে দাঁড়িয়ে ছিল" মনে আসছে ।হরতাল হয়না এই দানবসম ব্যবসাকেন্দ্রে বহুকাল. বাস থেকে নেমে বড়োজোর ১০ মিনিট পায়ে হাঁটা পথ. মেঠো আলপথ নয়,ছায়াঘেরা মলিন বাসস্থান নয় - ঘিঞ্জি,গমগমে মেট্রোপলিটনের পথ। আচ্ছা, "Where do all these highways go now that we are free?" কোথায় যাচ্ছে পথ? কোথায় যাচ্ছি আমরা? ক্রস করবো ঠিক এমন সময় দেখলাম একজন রাস্তার ঠিক মাঝখানে বসে আছেন শান্ত হয়ে। যিনি বিধাতার সঙ্গে সাপলুডো খেলেন। Rimbaud -র কথা মনে এলো, ওই দুটো তীক্ষ্ণ চোখ। তারপর ফিদা হুসেনের মন কেমন করা দৃষ্টি,তারপর যামিনী রায়,তারপর আরো - আরো যত নিরেট বোকা মানুষ জন্মেছিলেন এই পৃথিবীতে।
কিউবিকেলের মধ্যে গিয়ে যখন বসলাম তখন রাস্তায় জমে থাকা জল বরফের মতো ঠান্ডা ঠেকছে।কোনোরকমে বসে অপেক্ষা করতে করতেই একজন এসে অপেক্ষা করানোর জন্যে ক্ষমা চেয়ে ভেতরে নিয়ে গেলেন।প্রথম প্রশ্ন, "তুমি তো খুব প্যাশনেটলি লেখো? তাই তো?"
আলগা হাসলাম।"ইউ হ্যাভ গোট পোটেনশিয়াল,সে নিয়ে সন্দেহ নেই। আচ্ছা,আমরা কি চাই বলো তো? আমরা চাই তুমি আমাদের হয়ে লেখো,তোমার লেখা বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে ছড়িয়ে যাক,আর অন্যরা "ইন্সপায়ার্ড" হোক। ইউ ডিডন্ট টেল মি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকসে কি লিখতে দেয় ইন্টার্ন হিসেবে? তো আমাদের সংস্থায়,এই মডিউলে যাতে বেশি মানুষ লেখে। ইউ সিম টু বি সিক,ইউ নো? তো উই উইল ক্রিকেট এন আর্মি অফ হিউম্যান রিসোর্স।বোঝাতে পারছি? তো হ্যাঁ,যেটা বলছিলাম।তোমার লেখালিখি একটা স্ট্যান্ডার্ড হয়ে দাঁড়াক? মাত্র এই ক'ঘন্টা কাজ করে আর কি লাভ? প্রত্যেকদিন স্লট নিলে পারতে তো। " তখন সুভাষ চন্দ্র ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক ছাত্রের বয়ান পড়েছিলাম সদ্য
 বাবা অন্যের খেতে খেটে পয়সা রোজগার করে কোনো মতে লোন নিয়ে ছেলেকে পড়ান. সেই পোস্টে "হাহা" রিয়াক্ট করছেন কোনো এক সরকারি চাকরিজীবী। কিউবিকেলের ভেতর থেকে আকাশ দেখেই শুধু "ধূসর পাণ্ডুলিপি" মনে আসে "সো...যেটা বলছিলাম,হঠাৎ ইকোনোমিক্স ক্যানো?" "ওয়েল,এই কথাটা এই অফিসে এই কিউবিকেলের মধ্যে বসে বলাটা কতটা প্রাসঙ্গিক জানিনাএখন সমাজব্যবস্থা যে পর্যায় পৌঁছেছে,তাতে এই অর্থনৈতিক কাঠামো কখনোই মানুষকে হতাশা ছাড়া কিছু দেবেনাতবে ইন অর্ডার টু নো দা ক্রাইসিস,ইউ নিড টু স্টাডি দা সাবজেক্ট।"
"তুমি কি করতে চাও পরবর্তী কালে?"
"অন্তত কিউবিকেলের মধ্যে বসে এই কাজ আমার পোষাবেনা।উইল স্টিক টু একাডেমিকস।"
"ডিডন্ট সি দ্যাট কামিং। বেশ। আচ্ছা, আমাদের বিজনেস গোলটা তোমায় বুঝিয়ে দিই? আমাদের স্পনসররা আমাদের ফান্ড করে প্রত্যেকটা স্টুডেন্টকে মার্কেটের মতো করে তৈরী করে নিতে।এই অপরচুনিটি কিন্তু অন্য কেউ দেয়না।বুঝতে পারছো তো? ওকে। ইন্টারভিউ ইস ডান।কমপ্লিট দি এসাইনমেন্ট এন্ড ইউ আর ওয়েলকাম।"
" আই এম জাস্ট নট ইন্টারেস্টেড।"


ফিরে করুণাময়ী বাস স্টপে ঠাঁয় আধটি ঘন্টা দাঁড়িয়ে রইলাম। ঠান্ডায় বৃষ্টিতে অবস্থা প্রচন্ড শোচনীয়।আরো দেড় ঘন্টা বাসে এক মহিলা তার ভিজে ছাতা গায়ের মধ্যে রাখতে রাখতে এলেন।তখনো "রাস্তার নাম পাল্টায় একদিন/ধারা পাল্টায় মাও সে তুঙের চীন..."পাল্টায় মত,পাল্টায় বিশ্বাস/স্লোগান পাল্টে হয়ে যায় ফিসফাস/ফিসফাঁসটাও পাল্টে যেতে পারে/হঠাৎ কারো প্রচন্ড চিৎকারে/অন্য বাতাস নিয়ত পাল্টে দিচ্ছে/এমন কি সব পাল্টে দেওয়ার ইচ্ছে"..." কানে বাজছে অনবরত। ট্রাফিক সিগন্যালটা লাল হয়ে এলো।আচ্ছা আরো লক্ষ যোজন দূরত্ব পেরোলে কি তারপর বিপ্লব আসবে? কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক হওয়া যায়? লাল বড়ো প্রিয়,লাল বড়ো আপন। যারা তার মর্ম বোঝেইনা,খানকতক পতাকা নিয়ে বিপ্লবের স্ট্যাম্প মেরে দিতে চায়,তারাও কি সত্যিই আর কখনো,ভুল করেও স্বপ্ন দেখে? যখন রাস্তায় নামলাম,তখন নখের রং ধূসর হয়ে গেছে। ঠান্ডা লাগলেই হয়।আবছা করে মায়ের কথা মনে পড়লো।হাঁটার সময় বুঝতে পারলাম আমার পা-যুগল আর আছে না নেই বুঝতে পারছিনা...এতটা ইনটক্সিকেটেড
বহুদিন লাগেনি।ভালোবাসতে ইচ্ছে করে খুব। ভালোবাসার বড়ো অভাব এই পোড়া দেশে। প্রায় ডেলিরিয়ামের ভেতর তখন..."আগুন দেখেছি আমি কত জানলায়/ কত জানলায় তার মুখের আদল/কত জানলায় ঝরে অকাল বাদল...কত জানলার কাছে রাখা পোস্টার/কত কথা কত খিদে কত চিৎকার/কত জানলার কাছে কাতারে কাতার/মানুষ জমেছে দাবি গরাদ ভাঙার...ভাঙে যেন জানলার গরাদ সবার..."

পুনশ্চ : চরিত্ররা কাল্পনিকই হয়। তবে এখনো জানলার গা ঘেঁষে বড্ড বৃষ্টি পড়ছে।

Read 'The Neurotic's Delirium' here.
For more photographs as such,head to this link.

Post a Comment

0 Comments